"পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও অভিশপ্ত মমির রহস্য"
মমি হচ্ছে মিশরের শিল্প কর্মের মধ্যে একটি। মিশরের রাজাদের ফারাও বলা হয়ে থাকে। মিশরের লোকজন বিশ্বাস করতো রাজাদের মৃত্যুর পরে তাদের আত্না দেবতা রূপে এসে তাদেরকে পুনরায় শাসণ করবে। তাই তারা মৃত্যুর পর ফারাও রাজাদের দেহ মমি করে রাখতো যাতে করে মৃত্যুর পরে তাদের দেহ পচে না যায়। মিশরীয় ফারাওদের মধ্যে তুতেন খামেন ছিলেন তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেন তার মমি আবিষ্কারের পরে।
১৯ শতকের প্রথম দিকে ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ও তার দল খুজে পান তুতেন খামেনের সমাধি। মাটি খুড়ে প্রথমে কার্টার একটি সিঁড়ির সন্ধান পান। ফারাও তুতেন খামেনের নাম খোদাই করা একটি দরজায় গিয়ে সিঁড়িটি শেষ হয়েছে। কার্টার ও তার দলটি সিঁড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং তারা দরজাটি খুলে ফেলেন, দরজা খুলে ভেতরে যেতেই তাদের চোখে পরলো আরেকটি দরজা। দ্বিতীয় দরজাটি পরীক্ষা করে তাদের মনে হলো অতীতে কোনো একবার দরজাটি খোলা হয়েছিল, এবং তারপর সেটাকে আরো ভালোভাবে সীল করে দেওয়া হয়।
তবুও তারা হতাশ হলেন না। ১৯২২ সালের ২৬ই নভেম্বর কার্টার দরজাটি ফুটো করে এন্টিচেম্বারটির মধ্যে কি আছে তা দেখার চেষ্টা করলেন। তিনি দেখলেন সোনারপাত দিয়ে মোড়ানো পালঙ্ক, সোনা-রূপার তৈরি একটি সিংহাসন,খাদ্য সংরক্ষণের জন্য অনেক বাক্স এবং আরো মুল্যবান কিছু জিনিসপত্র। কিন্তু সবকিছু অগোছালো ছিল। এতে তারা ধারণা করে যে অতীতে এখানে লুটতরাজের চেষ্টা চালানো হয় এবং সেখানের প্রহরীদের সাথে লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে লুটেরা পালিয়ে যায় এবং প্রহরীরা কোনো কিছু ঠিক না করেই দরজাটি সীল করে দেয়।
পরবর্তী দুই মাস কার্টার এন্টিচেম্বারে রাখা ওইসব মূল্যবান জিনিসপ্ত্রের প্রচুর ছবি তোলেন। কিন্তু ছবি তুলেই তারা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। বহু চেষ্টার পরে ১৯২৩ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী কার্টার ও তার দল দরজাটি ভাঙতে সক্ষম হলেন, এন্টিচেম্বারে সোনার তৈরি একটি বড় বাক্স ছিল। তার ভিতরে ছিলো অপেক্ষাকৃত ছোট আরও ৩টি বাক্স। চতুর্থ বাক্সটি ছিলো মূলত হলুদ স্পোর্টের তৈরি মোমের একটি কফিন। কফিনটির ভিতরে একই রকম আরও ৩টি কফিন পাওয়া যায়। শেষ কফিনটি ছিলো সোনার তৈরি এবং এর ওজন ছিলো প্রায় ১৩৫ কিলোগ্রাম। চতুর্থ কফিনটির ঢালা খুলে প্রত্নতত্নবীদরা পেলো ফারাও তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহ।
মৃত ফারাও এর মাথা ও কাধ ঢাকা ছিলো একটি চমৎকার স্বর্ণের মুখোশ। তার বুকের উপর পরা ছিলো কিছু শুকনো ফুল। এছাড়াও তার আশেপাশের কক্ষে পাওয়া গেলো অসংখ্য মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী যার বেশির ভাগই ছিল স্বরনের। সম্পত্তির পরিমান এত বেশি ছিল যে তুতেন খামেনের সমাধি আবিষ্কারের পর মানুষ অবাক হয়ে যায়। তার কারণ হলো তুতেন ফারাও রাজাদের মধ্যে খুবই অল্প সময় রাজত্ব করেন এবং খুবই অপরিচিত ছিলেন। তার সমাধিতেই যদি এত ধণ-সম্পত্তি পাওয়া যায় তাহলে বড় সমাধি গুলোতে কি পরিমান সম্পত্তি লুকনো ছিল!!!
বর্তমান কালে এটি একটি খুবই বড় প্রশ্ন। কিন্তু এসব চিন্তা করে এখন কোন লাভ নেই কারন অনেক আগেই সেসব সম্পদ চোর-ডাকাতরা নিজেদের করে নিয়েছে। তুতেন খামেন খুবই অপরিচিত ফারাও রাজা ছিলেন বলেই চোর-ডাকাতরা তার সমাধি খুজে পাওয়ার চেষ্টাই হয়তো করেননি। একারণেই আধুনিকবেশ্বের আবিষ্কৃত একমাত্র অক্ষত সমাধিই হলো তুতেন খামেনের সমাধি। এখানেই শেষ নয়, মমি আবিষ্কারের পরে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রত্যেকেরই রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। সব নাকি তুতেন খামেনের মমির অভিশাপে হয়েছে।
এর আগেও যারাই তার পিরামিডে ধন-সম্পদের লোভে গিয়েছিলেন তারাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মমির অভিশাপে বিশ্বাস করতেন আবার অনেকেই করতেন না। তুতেন খামেনের মমির উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া প্রায় সকলেই আশ্চর্যজনক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন এবং এভাবে ওই দলের প্রায় ২১ জনের মৃত্যু হয়। আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে গেলেন একজন, আর তিনি হলেন প্রত্নতত্নবীদ হাওয়ার্ড কার্টার।
No comments