"Time Travel" বা "সময় যাত্রা" কি সম্ভব???
"Time Travel" বা সময় যাত্রা কথাটির সাথে হয়তো আমরা অনেকেই অনেক আগে থেকেই পরিচিত আবার অনেকে হয়তো জানেই না যে সময় যাত্রা কি? বিজ্ঞানের মতে সময় যাত্রা সম্ভব। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি উড়োজাহাজ কল্পনা করেছিল যা দু'শত বছর পরে বাস্তবায়িত হয়েছিল তেমনি আজ বিজ্ঞানের কল্পনা সময় যাত্রাও একদিন বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো "সময় যাত্রা" কি করে সম্ভব হবে?
সময় যাত্রা সম্পর্কে বিজ্ঞান বলে সময় চলছে এবং চলেই যাচ্ছে। এমন প্রবাদ ও আছে সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সময় চলতেই থাকে আর আমাদেরও বয়স বাড়তে থাকে। কিন্তু কখনোই কি কেউ ভেবে দেখেছে এই সময় কিভাবে শুরু হয়েছে? আসলে ৯০ ভাগ মানুষই এটা ভাবার প্রয়োজনবোধই মনে করেন না। কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষ একটা বিষয় জানে এবং মানে তা হলো, সারা বিশ্বের সময় সবার জন্য সমান, যা ৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট আর ৬০ মিনিটে ১ ঘন্টা। গ্যালিলিও এর আবিষ্কৃত ধারণা অনুযায়ী সেটাই সত্যি। কিন্তু আইনস্টাইন এর আবিষ্কৃত ক্রান্তিকারী সূত্র মানুষকে চিন্তায় ফেলে দেয়। যার নাম থিওরি অফ রিলেটিভিটি। আলবার্ট আইনস্টাইন গণিতের মাধ্যমে এই থিওরিতে প্রমাণ করেন সময়ের অন্তরাল আছে। এই কঠিন থিওরি খুঁজতে হলে গণিতে দক্ষ হতে হবে।
থিওরি অফ রিলেটিভিটিতে আইনস্টাইন প্রমাণ করেন আমাদের এই ইউনিভার্সের সময় সব স্থানে ভিন্ন ভিন্ন থাকে, শুধু তাই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সময়েও পার্থক্য থাকে। থিওরি অব রিলেটিভিটির আগে মানুষের ধারণা ছিলো পৃথিবীর ১ সেকেন্ড মঙ্গল গ্রহের ১ সেকেন্ডের সমান। কিন্তু সত্যিটা হলো মহাকাশ এবং সময় একে অপরের সাথে যুক্ত, যাকে স্পেস টাইম বলা হয়। সময়কে বাড়ানো বা কমানো সম্ভব, সহজ কথায় ৫৯ মিনিটে ১ ঘন্টা বা ৬১ মিনিটে ১ ঘন্টা করা সম্ভব। সময় ভ্রমান্ডে সমুদ্রের মতো যার একদিকে ভাটা এবং একদিকে জোয়ার। অর্থাৎ সময় মহাকাশের কোনো অংশে খুব বেশী গতিতে চলে আবার কোনো অংশে খুব কম গতিতে চলে। থিওরি অব রিলেভিটি ওজনের তারতম্যে সময়ের অন্তরালকে প্রমাণ করে, যে গ্রহ যে বস্তুর ওজন বেশী হয় সেই ক্ষেত্রে সময় ধীরে চলে, যেমন পিরামিডের পার্শ্ববর্তী স্থানের সময় পৃথিবীর বাকী অংশের তুলনায় ধীরে চলে।
কিন্তু এটা সাধারণত মানুষেরা বুঝতে পারে না। কারণ এই অন্তরাল এতটাই কম যা ধরা সম্ভব নয়। আনুমানিক ১০০ বছরে পিরামিডের সময় বাকী পৃথিবীর তুলনায় ১ সেকেন্ড ধীরে চলে। যেখানে এটা প্রমাণ পায় সময় অতীতে যাওয়াটা সম্ভব, বা কেউ যদি ১০০ বছর পর পিরামিড থেকে পৃথিবীর বাকী অংশে যোগ দেয় তাহলে সে ১ দেকেন্ড ফিউচারে চলে যাবে। আর মানুষের এই ফিউচারে যাওয়ার উৎসাহ থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আইনস্টাইন এর এই থিওরিতে স্পষ্ট যে স্পেস টাইমের ইকুয়েশন থেকে এই টাইম ট্রাভেল সম্ভব। যদি কোনো বস্তু স্পেস টাইম অর্থাৎ ৩ লক্ষ কিলোমিটার পার সেকেন্ড গতিতে বা তার ৯০ ভাগ গতিতে ছুটতে পারে তবে সে সময়ের গতিকে ধরতে পারে। কিন্তু এই থিওরি ১৯ শতকে শুধু খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ ছিলো। এই শতকে ব্ল্যাক হোলকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস যখন টাইম ট্রাভেল এবং থিওরি অফ রিলেটিভিটিকে ব্যাখ্যা করে দেয় তখন এটা স্পষ্ট হয় টাইম ট্রাভেল ১০০ ভাগ সম্ভব। স্টিফেন হকিংস অনুমান করতে বলেন একটি ট্রেন ট্রাকের বা রেল লাইনের যা পৃথিবীর চারিদিকে বিস্তৃত হবে, তারপর একটি ট্রেনকে আলোর গতিতে চলার অনুমান করতে বলা হয়। যদি ট্রেনটি আলোর গতিতে পৃথিবীর চারিদিকে চলতে পারে তবে ওই ট্রেনটির তুলনায় পৃথিবীর সমস্ত বস্তু ধীর গতিতে চলবে এবং সময়ের অন্তরাল তৈরি হবে।
এভাবে ট্রেনটি যতক্ষণ চলতে থাকবে ততক্ষন পৃথিবীর সাথে ট্রেনটির সময়ের অন্তরাল তৈরি হতে থাকবে। ধরা যাক ১লা জানুয়ারী ২০১৮ তে এমন একটি ট্রেন চলা শুরু করলো কিছু যাত্রী নিয়ে এবং ধীরে ধীরে ট্রেনটি আলোর গতি ধরতে শুরু করলো বা তার ৯০ ভাগ গতি ধরতে সক্ষম হলো, তখন ওই ট্রেনটির ভিতরে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটবে, যা ঘটবে তা হলো ওই ট্রেনের ভেতর সময় ধীর গতিতে চলবে। সেই ট্রেনের সময় যখন এক সপ্তাহ অতিক্রম করবে তখন পৃথিবীর ৬৫ বছর অতিক্রম হয়ে যাবে। সুতরাং ট্রেনের যাত্রীরা পৃথিবীতে ১ সপ্তাহ পর নেমে পৃথিবীর ২০১৮ যোগ ৬৫ এর ফলে পৃথিবীর ২০৮৩ সাল হয়ে যাবে। তাদের ছেলে মেয়েরা বুড়ো হয়ে যাবে তবে ট্রেনের যাত্রীরা মাত্র ৭ দিনের বড় হবে। কিন্তু এই কল্পনাটির ব্যাখ্যার মধ্যে সত্যি থাকলেও তা আজও শুধুই কল্পনা। টাইম ট্রাভেল সত্যি জানলেও আলোর গতিতে ট্রেন ছুটানোর ক্ষমতা মানব সভ্যতার এখনো অর্জন হয়নি। তেমনি যদি অর্জন হতো তাহলে শুধু টাইম ট্রাভেল নয় ভিনগ্রহে যেতেও সক্ষম হতো মানুষ। তবে এটা সত্যি যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব কিন্তু মানুষ দ্বারা টাইম ট্রাভেল করার মত যন্ত্র আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু এতে নিরাশ হয়ে পরার কিছু নেই, মানুষের নির্মাণ ছাড়াও প্রকৃতির কিছু নির্মাণ মানুষকে টাইম ট্রাভেল করাতে সক্ষম।
যেমন ব্ল্যাক হোল। ব্ল্যাক হোল হলো মহাকাশে থাকা এমন একটি অংশ যারা গ্রাভেটি পৃথিবীর গ্রাভেটির তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি। এতটাই বেশি যে কোনো গ্রহ বা নক্ষত্র তার সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে চলে যায় এবং তা আর কোনোদিনও ফিরে আসে না। এই কাল হোল তৈরি হয় যখন মহাকশে সূর্যের মতো কোনো নক্ষত্র বিনাশ হয় তখন তা ব্ল্যাক হোলে পরিণীত হয়। ব্ল্যাক হোলের গ্রাভেটির টান থেকে আলোক রশ্মিও বেঁচে ফিরতে পারে না, আলোক রশ্মিও এই ব্ল্যাক হোলে আটকে যায়। ব্ল্যাক হোল সম্পূর্ণ অন্ধকার, ব্ল্যাক হোলের মূল হলো ঘনত্ব। যদি পৃথিবীকে চাপ প্রয়োগের ফলে একটি ক্রিকেট বলের আকার দেওয়া হয় এবং এর ভেতরে সব বস্তু একসাথে হয়ে এমন ঘনত্বের সৃষ্টি হবে যে সব থেকে ধারালো বস্তুও সেই বলটিকে ছেদ করতে পারবে না। তেমনই হলো ব্যাক হোলের ঘনত্ব। ব্ল্যাক হোলের মধ্যে অনেক গ্রহ, নক্ষত্র গিয়ে তার ঘনত্ব অনেক বেশি হয়ে যায় এবং এর ঘনত্ব ও ওয়জন সূর্যের তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি।
ব্ল্যাক হোলের একটি সেপ্টি অঞ্চল আছে যদি সেখানে মানুষ স্পেসশিপের মাধ্যমে ঘুরতে সক্ষম হয় তবে মানুষ টাইম ট্রাভেল করতে সক্ষম হবে। থিওরি অব রিলেটিভিটির এটা সম্ভব। কারণ ব্ল্যাক হোলের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে সেখানের চারিপাশের সময় পৃথিবীর তুলনায় দুই গুণ ধীরে চলে। সেখানে স্পেসশীপে ১০ বছর ঘুরে আসলে পৃথিবীর সময় তখন ২০ বছর হয়ে যাবে। এতে করে স্পষ্ট যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব হতে পারে ব্ল্যাক হোলের মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের দ্বারা এটি সম্ভব নয়। এটি এখনো বিজ্ঞানের কল্পনা মাত্র।
No comments